রাজধানীর সাদেক এগ্রো থেকে ১৫ লাখ টাকায় ছাগলকান্ডে ভাইরাল হওয়া মতিউর রহমানের ছেলে মুশফিকুর রহমান ইফাতের পরিচয় সনাক্ত হওয়ার পর লাকি-মতিউর এর দম্পতির সংসার ওলট-পালট হয়ে গেলো। লায়লা কানিজ লাকি নরসিংদীর রায়পুরা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান। তাঁর স্বামী রাজস্ব বোর্ডের কর্মকর্তা মতিউর রহমান। ভাইরাল হওয়া মুশফিকুর রহমান ইফাত লাকির ছেলে না হলেও তাঁর সতীনের ছেলে। এদিকে রাজস্ব কর্মকর্তা মতিউর রহমান বিভিন্ন মিডিয়া ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দাবি করেন ইফাত তাঁর ছেলে নয় এবং তাঁর সাথে কোনো আত্মীয় সম্পর্ক নেই। অপরদিকে লায়লা কানিজ লাকি’র সোনার তরী নামে ফেসবুক আইডি এবং তাঁর অনুসারীদের ব্যক্তিগত ফেসবুক আইডি থেকে একই দাবি করে লেখেন আমার একমাত্র ছেলে তৌফিকুর রহমান অর্ণব, ছেলের বউ এবং নাতনি। অপপ্রচারের জন্য তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি। ইফাদ নামে কোন ছেলে নেই। ছবিসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পোস্ট করেন। তাদের এ দাবির সত্যতা যাচাই করতে গিয়ে বের হয়ে আসে ইফাতের আসল পরিচয়। এদিকে ইফাতের মামা ফেনী-২ আসনের সংসদ সদস্য নিজাম উদ্দিন হাজারী বলেন ইফাত তাঁর মামাতো বোনের সন্তান। আর মতিউর রহমানই ইফাতের বাবা। তিনি আরও বলেন, ইফাত রাজস্ব বোর্ডের কর্মকর্তা মতিউর রহমানের দ্বিতীয় পক্ষের ছেলে। আমি ধারণা করছি রাগ করে মতিউর রহমান ইফাতের সঙ্গে সম্পর্ক অস্বীকার করেছেন। মতিউর রহমান নিয়মিত দ্বিতীয় পক্ষের স্ত্রীর নানা পারিবারিক অনুষ্ঠানেও অংশ নেন। মতিউর রহমান শাম্মী আকতার নামে মহিলাকে বিয়ে করেন। সেই মহিলার ছেলে ইফাত। তিনি ওই মহিলাকে নিয়ে রাজধানীর ধানমন্ডির ৮নম্বর রোডের ৪১ নম্বর বাড়িতে বসবাস করেন। এছাড়াও ইফাতের জাতীয় পরিচয় পত্রে বাবার নাম মতিউর রহমান ও মাতার নাম শাম্মী আকতার লেখা রয়েছে। তাদের গোপন সংসারের কথা বিভিন্ন মিডিয়া সহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশ হলে লাকি-মতিউর দম্পতির সংসারে ওলট-পালট সৃষ্টি হলে পুরো রায়পুরা জুড়ে গুঞ্জন শুরু হয়।
সরজমিনে রায়পুরা ঘুরে বিভিন্ন মানুষের সাথে কথা হলে তারা বলেন, রায়পুরা উপজেলার মরজালের মেয়ে লাকি। সে আগে ঢাকায় থাকতো। আগে কখনও তিনি রায়পুরায় আসেনি। মরজাল এলাকায় নয়-ছয় কইরা কিছু ধানি জমি ক্রয় করে আর বাকি জমি জোর করে নিয়ে প্রায় ৪০ বিঘার উপর পার্ক করছে। এই পার্কের সুবাদে রায়পুরায় ঘনঘন আসা-যাওয়া ছিল তাঁর। হঠাৎ কইরা টেহ্যার জোরে বিনা ভোটে চেয়ারম্যান হইছে। আমরা জানি তার স্বামী বড় সরকারি অফিসার। নাম মতিউর রহমান। সে ঢাকায় থাকে। লাকিও স্বামী-সন্তান লইয়া ঢাকা থাহে। আমরা জানতাম লাকির স্বামী এক বিয়া করছে। এহন দেহি তার বউ দুইটা। এর জন্যই লাকি এত টাহ্যার মালিক।
লাকির মরজালে আলিশান ডুপ্লেক্স বাড়িতে গিয়ে কাউকে পাওয়া যায়নি। তবে তার মরজালস্হ ওয়ান্ডার পার্কে গিয়ে দেখা যায়, সেখানে উঠতি বয়সের ছেলে-মেয়ের দর্শনার্থীর সংখ্যা বেশী। পার্কের ভিতর রয়েছে ছোট ছোট অসংখ্য ঘর। সেইসব ঘরে ছেলে-মেয়েরা মনোরঞ্জনে ব্যস্ত। পার্কের বাইরে থাকা আশপাশের লোকজনেরা ভয়ে ক্যামেরার সামনে কথা না বলেও তারা জানান, পার্কের মালিক উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান। তিনি ক্ষমতাধর ব্যক্তি। তাঁর বিরুদ্ধে কথা বলার সাহস কারও নাই। আমরা সাধারণ মানুষ। এসব দৃশ্য আমরা প্রতিদিনই দেখি। স্কুল-কলেজ ফাঁকি দিয়ে এখানে ছেলে-মেয়েরা ঘুরতে আসে। তাঁরা সকালে টিকেট কেটে ভিতরে যায়। আর বের হয় বিকেলে। ওইসময় গ্রামের মানুষদের পার্কের ভিতর যেতে দেয় না। এখন বুঝেন এটার ভিতর কি ধরনের অসামাজিক কার্যকলাপ হয়ে থাকে।
এবিষয়ে জানতে, লায়লা কানিজ লাকি’র মোবাইল ও হোয়াইটসঅ্যাপ নম্বরে একাধিকবার ফোন দিলেও তিনি তা রিসিভ করেননি। তাই তার বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।